:: এম.আর মাহমুদ ::
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যাকান্ডের জের ধরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের এসপি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রায় ১৫০৭ জন দেশের বিভিন্ন রেঞ্জে বদলী করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ পরিমাণ নতুন পুলিশ এ জেলায় যোগদান করেছেন। নতুনভাবে যোগদান করা পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি.আই.জি আনোয়ার হোসেন কক্সবাজারের বেশ ক’টি থানা পরিদর্শন করে নবাগত পুলিশের পরিদর্শক, সহকারী পরিদর্শকসহ সর্বস্তরের পুলিশকে একটি বার্তা দিয়েছেন ‘পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করার জন্য।’ মাঠ পর্যায়ে নবাগত পুলিশ কর্মকর্তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার মানসে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক সাথে জেলার সব পুলিশকে বদলীর পর নবাগত পুলিশ কর্মকর্তারা হয়তো জেলার ৮ উপজেলার অপরাধীদের সব ধরণের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে একটু সময় লাগা স্বাভাবিক। ডি.আই.জি মহোদয় ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা হালনাগাদে নির্দেশনাও দিয়েছেন। আশা করি অচিরেই ইয়াবা ও মাদক পাচারে জড়িতরাও পুলিশের জালে আটকা পড়বে।
অপরদিকে হঠাৎ করে পুলিশের (সরকারি) ভাবে দেয়া সব মোবাইল ফোন পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পুলিশের ব্যবহৃত নতুন মোবাইল নম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দিয়েছে। ফলে বেশিরভাগ মানুষ থানার নতুন মোবাইল নম্বর পেয়েছে। বিপদকালীন সময় পুলিশের কাছে মোবাইল করতে ভুক্তভোগীদের আর কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটি কথা না বলে উপায় নেই। স্কুল জীবনে পড়া একটি বাক্য বার বার মনে পড়ে “কত রূপ স্নেহ করি, স্বদেশী কুকুর ধরি, বিদেশী ঠাকুর ফেলিয়া।” বাক্যটির সারমর্ম না বললে হয়তো অনেকে এ বাক্যটির যথার্থতা খুঁজে পাবে না। বাংলাদেশ পুলিশের সাথে গ্রামীণ ফোনের সাথে চুক্তি হয়েছে পুলিশের সব ইউনিটের জন্য ৩ লাখ সিম প্রদান করবে। পুলিশ এখন থেকে গ্রামীণ ফোনের সিমগুলো ব্যবহার করবে। এক্ষেত্রে মোবাইলে কল প্রতি যে টাকাটা ব্যয় হবে তা জমা হবে গ্রামীণ ফোনের অর্থ ভান্ডারে। এ টাকা থেকে সরকার নিশ্চয় ভ্যাট পাবে। তবে কথা হচ্ছে গ্রামীণ, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিক এসব মোবাইল কোম্পানী কোনটাই স্বদেশী নয়। এসব কোম্পানী মোবাইল খাতে যে অর্থ আয় করে সে অর্থের সিংহভাগ যাবে ওইসব মোবাইল কোম্পানীর স্ব স্ব দেশে। অথচ আমাদের দেশীয় (রাষ্ট্রীয়) একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা টেলিটক। পুলিশসহ সব দপ্তরে সরকারি টেলিটকের সিম বাধ্যতামূলক করা হলে সমূদয় অর্থ দেশের অর্থ ভান্ডারে জমা হত। এক্ষেত্রে পুরনো একটি প্রবাদ না বললে হয় না “গেঁও যুগি ভিক্ষা পায় না।’ যার অর্থ স্বদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বদেশে সম্মান পায় না। তবে সরকার বিভিন্ন সরকারি চাকুরীর আবেদনের ফি ও ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে টেলিটক সিমের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বাধ্যতামূলক করেন। ফলে এখনও রুগ্ন প্রতিষ্ঠানটি লবেজান অবস্থায় টিকিয়ে আছে। উপজেলা পর্যায়ে টিএনটি ভবনগুলো দেখলে মনে হয় একটি পরিত্যক্ত ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে ‘তাল গাছ এক পাঁয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে’। দেশের আলোচিত সমালোচিত অনেকেই হাজার হাজার কোটি টাকা নানা কৌশলে বিদেশে পাঁচার করেছে। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন বিভাগ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা করছে। তবে পাঁচার হওয়া টাকাগুলো ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ। তারপরও এসব টাকা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক একটি প্রবাদ না বললে হয় না “ঘরর ছিন্নি পরে হায়, ওছনি হদ্দা লই বেরার।” অথচ আমরা কথায় কথায় বলে থাকি “স্বদেশী পণ্য ব্যবহার করে হব ধন্য।” রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক সিম সরকারিভাবে সব প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে আবেদন জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশীয় অর্থগুলো বিদেশীদের হাতেই চলে যাবে।
পাঠকের মতামত: